You Belong With Me
সায়নী সেন
You Belong With Me
ঘড়িতে সকাল ছটা বাজতেই উনিশ/ কুড়ি বছরের ঘুমন্ত একটি মেয়ের মুখের উপর জল পড়তেই বিছানার ওপর সে ধরমরিয়ে উঠে বসে । ঘুম ভাঙার সাথে সাথেই তার কানে আসে কারুর তীক্ষ্ণ ঝাঁজালো গলার আওয়াজ ।
” এই যে নবাব নন্দিনী!!! বলি ঘোড়া বেঁচে শুয়ে আছিস যে ! ঘরের বিস্তর কাজ কি তোর মরা মা এসে করে দেবে ???? ওঠ ঘুম থেকে। আর উঠে রান্নাঘরে যা। ওখানে বিস্তর কাজ পড়ে আছে । ডাই করা জামা কাপড় পড়ে আছে বাথরুমে । ওইগুলো কি তোর মরা বাপ এসে কেচে দেবে??? পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস যে বড়!!” প্রভাবতী দেবী ঝাঁঝিয়ে কথাগুলি বললেন। প্রভাবতী চক্রবর্তী অর্থাৎ এই কন্যাটির মামি। এই বাড়ি ‘চক্রবর্তী নিবাসের ‘ মালকিন।
মেয়েটি : ” খবরদার বলছি মামি ,,,,,, !! আমার মা-বাবাকে গালি দেবে না তুমি। ওরা তোমার কোন ক্ষতি করেনি। ” মেয়েটি চিৎকার করে প্রতিবাদ করে ।
প্রভাবতী দেবী মেয়েটির গালদুটো নিজের হাতে চেপে ধরে শক্ত করে। মেয়েটি যন্ত্রণায় চোখ মুখ কুঁচকে নেয়। ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে যায় । দাঁতে দাঁত চেপে প্রভাবতী দেবী রেগে বলেন , ” বড্ড চোপা হয়েছে তোর আজকাল। এই বিষদাঁত যদি না ভেঙেছি আমি আজ , আমার নামও প্রভাবতী চক্রবর্তী নয়।”
ওনাদের কথার মাঝেই একজন ৪৫- ৪৬ বছরের এক ভদ্রলোক ওনাদের সামনে এসে দাঁড়ান। ইনি হলেন অনির্বাণ চক্রবর্তী । এই চক্রবর্তী নিবাসের মালিক ও সম্পর্কে মেয়েটির মামা।
” প্রভা !!!!!! । ” অনির্বাণ বাবু চিৎকার করে নিজের স্ত্রীর নাম ধরে ডেকে ওঠেন ।
অনির্বাণ বাবু :” কি করছো ???? ছাড়ো ওকে। সকাল সকাল এই বাপ-মা মরা মেয়েটাকে কেন এত বকছো???” ছুটে এসে তিনি মেয়েটিকে নিজের স্ত্রীর কাছ থেকে ছাড়িয়ে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করেন, ” মিঠাই তুই ঠিক আছিস????”
প্রভাবতী দেবী : ” উম !!!! ঢং দেখে মরে যাই। দরদ একেবারে উপচে পড়ছে। ওই মেয়ের এত তাড়াতাড়ি কিছু হবে না। ওর জন্মই হয়েছে আমাদের হাড়মাস জ্বালানোর জন্য।” প্রভাবতী দেবী মুখ বেঁকিয়ে কথাগুলি বলেন । তারপর নিজের স্বামীর দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলেন,
প্রভাবতী দেবী : “এই যে তুমি, এই নাও বাজারের থলে আর বাজারে যাও।” নিজের কথা শেষ করে রাগে গজগজ করতে করতে প্রভাবতী দেবী বাড়ির ভিতরে চলে যান। প্রভাবতী দেবী চলে যেতেই অনির্বাণ বাবু মেয়েটির মাথায় পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দেন ।
অনির্বাণ বাবু : ” মামির কথায় কিছু মনে করিস না মিঠাই। ওর এই রূপ আচরণের জন্য আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইছি । আর মন খারাপ করে বসে থাকিস না। আজ তো তোর কলেজের প্রথম দিন । আমি অংশুমানের সাথে কথা বলে রেখেছি ; কলেজে তোর কোন রকম অসুবিধা হলে তুই অংশুমানের সাথে কথা বলে নিবি । এবার যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। খাবার খেয়ে তারপর সব কাজ করবি ।এর অন্যথা হলে আমি কিন্তু খুব রাগ করব মিঠাই। ” কথা শেষে অনির্বাণ বাবু বাজারের থলে হাতে বেরিয়ে যান ।
মেয়েটিও চোখের জল মুছে বিছানা ছেড়ে বাথরুমে চলে যায়। এই মেয়েটি হল আমাদের গল্পের নায়িকা , রাধিকা সেন। রাধিকাকে বাড়িতে সবাই ‘মিঠাই ‘ বলে ডাকে । ছোটবেলায় মা বাবা মারা যাওয়ায় মামাবাড়িতে মানুষ হয়েছে। ফর্সা, ছিপছিপে চেহারার কাজল টানা শান্ত দুটো চোখের অধিকারিণী রাধিকা নিজের গোলাপি ঠোঁটের মিষ্টি হাসির আড়ালে নিজের মনের সব দুঃখ লুকিয়ে রাখে। এই মামা বাড়িতে আপন বলতে তার মামা ছাড়া আর কেউ নেই। মামা -মামি তাকে থাকতে দিয়েছে ও চার বেলা খেতে দিয়েছে ।
তার বদলে বাড়ির সব কাজ তাকে করে দিতে হয়। সবার ফাইফরমাশ খাটতে হয়। আর তারই সাথে শুনতে হয় মামির মুখ ঝামটা । মামার নামে এই বাড়ি হলেও এই বাড়ির হর্তাকর্তা , বিধাতা তার মামি, প্রভাবতী চক্রবর্তী । ওনাদের দুই মেয়ে- ঈশানী আর পিয়ালী । ঈশানী ছোট, ক্লাস টুয়েলভে পড়ে। আর পিয়ালী বড়, কলেজে পড়ে । পড়াশোনার চেয়ে সাজগোজ, কুট কাঁচানি করতেই বেশি ভালোবাসে পিয়ালী । রূপে-গুণে রাধিকার ধারে কাছে যায় না পিয়ালী । তাই রাধিকার প্রতি তার আক্রোশটা বেশি। ঈশানী নিজের মতন থাকতে বেশি পছন্দ করে ।
তবে রাধিকাকে তার অপছন্দ নয় । বরং জীবনের প্রতি বেঁচে থাকার রাধিকার এই অদম্য জেদ বারবার ঈশানীকে প্রভাবিত করে । রাধিকাকে সে ভালোবাসে তবে মুখে তা প্রকাশ করে না । রাধিকা ছোট থেকেই পড়াশোনায় খুব ভালো । স্কুলে ও কলেজের সমস্ত পড়ার খরচ রাধিকা টিউশন করে চালিয়েছে। মামা টাকা দিতে চাইলেও মামি তা করতে দেননি ।
মামির কাছে তার পড়াশুনা চিরদিনই বাড়তি খরচ ছিল । সকাল সাতটা থেকে রাধিকার এই বাড়ীতে কাজ শুরু হয়। কাপড় কাচা, ঝাঁট দেওয়া , বাসন মাজা , কুটনো কাটা , রান্না করা- সবকিছুই তাকে করতে হয় একা হাতে। ঘড়িতে সকাল ৯ টা বাজতেই পিয়ালী চিৎকার করে রাধিকাকে ডাকে।পিয়ালী: ” মিঠাই আমার স্নানের জল কোথায়? ”
রাধিকা কাজ করতে করতেই রান্নাঘর থেকে উত্তর দেয়, রাধিকা: “আনছি এক্ষুনি । ”
ঈশানী নিজের ঘরে স্কুলের জন্য রেডী হচ্ছিল। ঘর থেকে রাধিকাকে জোরে ডেকে বলে,
ঈশানি: ” দি ,,,,, আমার টিফিনটা দে তাড়াতাড়ি। আমার স্কুলে যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে।”
রাধিকা সবে জামাকাপড়গুলি ছাদে গিয়ে মেলে এসে রান্নাঘরে বসে একটু জিরোছিল । তাড়াহুড়োতে ছাদে খালি পায়ে চলে গেছিল । গরমে ছাদে ছ্যাকা খেয়ে পায়ের তলা লাল হয়ে গেছে। ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছে সে সিঁড়ি দিয়ে তাড়াহুড়ো করে নামার জন্য সে রীতিমত হাপাচ্ছে এখনো । হাঁপাতে হাঁপাতেই রাধিকা বলে ,
রাধিকা: “দিচ্ছি এক্ষুনি । ”
রাধিকা তাড়াতাড়ি ঈশানীর টিফিন টিফিন বক্সে ভরে। রাধিকার কাজের মাঝেই প্রভাবতী দেবী রান্না ঘরে প্রবেশ করেন ।
প্রভাবতী দেবী: “এই যে নবাব নন্দিনী এখনো রান্না হয়নি কেন??? তোর মামা কি না খেয়ে অফিস যাবে??আর ইশু কি টিফিন না নিয়ে স্কুলে যাবে??? তাড়াতাড়ি হাত চালা। আমার পিউ বেচারী বসে আছে কখন থেকে স্নানে যাবে বলে ; গরম জলটা কখন দিবি শুনি ??? তোর মরে যাওয়ার পর ??? ”
রাধিকা (ঈষৎ হেসে ): ” আমি মরে গেলে কি আমার ভূতকে দিয়ে কাজ করাবে মামি ??? ”
প্রভাবতী দেবী(রেগে , দাঁত মুখ খিঁচিয়ে ): “ফের মুখে মুখে কথা?? !! তোর মুখ যদি আজ বন্ধ না করেছি দেখ! ”
প্রভাবতী দেবী নিজের কথা শেষ করে রান্নাঘরে একমুহুর্ত চোখ বোলাতেই গরম খুন্তির দিকে চোখ যেতেই মুখে একটা ক্রুর হাসি ফুঁটিয়ে সেই গরম খুন্তির দিকে এগিয়ে যান। তারপর তা হাতে নিয়ে রাধিকার দিকে এগিয়ে যাওয়ার মাঝপথেই থামতে হয় ওনাকে। মায়ের মনের অভিসন্ধি বুঝতে পেরে ঈশানী রান্নাঘরে ছুটে এসে মায়ের পিছনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ডেকে ওঠে ।
ঈশানী : “মা… !!!!!! ”
প্রভাবতী দেবী মেয়ের চিৎকারে চমকে উঠে বিরক্তমুখে তাকান তার মেয়ের দিকে ।
প্রভাবতী দেবী :” কি হয়েছে ??? চিল্লাচ্ছেন কেন ???”?ঈশানী :” মামিয়া ফোন করেছে তোমায়। এই নাও কথা বলো । আর বাবা বাজার থেকে ফিরেছে, তোমায় জানাতে বলল।”
প্রভাবতী দেবী (বিরক্ত মুখে ): ” আচ্ছা । ফোনটা দে দেখি, কথা বলি বউদির সাথে । ”
প্রভাবতী দেবী ফোনটা হাতে নিয়ে রাধিকার দিকে তাকিয়ে রাগ ভরা কন্ঠে বলেন,
প্রভাবতী দেবী : ” শুনলি তো মামা এসেছে । গ্যাট হয়ে বসে না থেকে যা গিয়ে মামার কাছ থেকে বাজারটা নিয়ে আয় । ”
নিজের কথা শেষ করে ফোনটা কানে দিয়ে ফোনের ওপারে থাকা ব্যক্তির সাথে কথা বলতে বলতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন প্রভাবতী দেবী । ঈশানী হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো । রাধিকা তখনও নিজের কাজে ব্যস্ত। রাধিকা :” ইশু তোর টিফিন। তুই খেতে বস আমি মামার কাছ থেকে বাজারটা নিয়ে এসে খেতে দিচ্ছি তোকে। ”
রাধিকা এই বলে ঈশানির হাতে তার টিফিন বক্সটা ধরিয়ে দেয়। ঈশানি অবাক চোখে রাধিকার দিকে তাকিয়ে টিফিন বক্স নিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে গেল। মনে মনে ভাবল , ঈশানী : ” দি , তুই কি ধাতু দিয়ে তৈরি বলতো ?? মা এত বাজে ব্যবহার করে তোর সাথে,,,, এত কথা শোনায় আর তুই সব মুখ বুজে সহ্য করে আমাদের সবার খেয়াল রাখিস। যাই হয়ে যাক তোর কর্তব্য করতে ভুলিস না । তোকে যতো দেখি ততো তোর প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে যায় ।
লাভ ইউ দি।” ঈশানী বেরিয়ে যেতেই রাধিকার ঠোটের কোনায় হাসি খেলে গেল। প্রত্যেক বারের মতন এবারও রাধিকাকে ঈশানী তার মায়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল। এত বছর ধরে এই রকম ভাবেই ঈশানী তাকে বাঁচিয়ে আসছে। রাধিকা (মনে মনে বলে ) : ” আমি জানি ইশু তুই মুখে না বললেও আমায় তুই খুব ভালবাসিস । যতক্ষণ বাড়িতে থাকিস আমাকে তোর মায়ের কোপ থেকে কোন না কোনভাবে ঠিক বাঁচিয়ে দিস। এই বাড়িতে মামার পর তুই একমাত্র যে আমায় ভালবাসে। লাভ ইউ ইশু । ”
রাধিকা হাতের কাজ শেষ করে বাথরুমে গিয়ে গরম জল দিয়ে আসে পিয়ালীকে । তারপর মামার কাছে যায় বাজার আনার জন্য । রাধিকার এখন দম ফেলার সময় নেই। বাজার নিয়ে রান্না ঘরে রেখে কুটনো কেটে তাড়াতাড়ি রান্না চাপায়। রান্নার ফাঁকেই উঁকি মেরে একবার ঘড়ির দিকে তাকায় । হাতে বেশি সময় নেই তার । আজ কলেজে প্রথম দিন তার; তাই কোনভাবেই লেট করা যাবে না আজ ।
যত দ্রুত সম্ভব নিজের হাতের কাজ শেষ করার চেষ্টা করে রাধিকা। এরমধ্যে রান্না শেষ করে অনির্বাণ বাবু আর ঈশানীকে খেতে দেয়। পিয়ালী আর মামির জন্য খাবার বেড়ে টেবিলের ওপর ঢাকা দিয়ে রাখে । তার সাথে রাখে অনির্বাণ বাবুর লাঞ্চ বক্স । অনির্বাণ বাবু খাওয়ার ফাঁকে একবার তার বোনঝিকে দেখেন। মেয়েটা কেমন মুখ বন্ধ করে অবলীলায় কাজ করে যাচ্ছে সব ।
তিনি চেয়েও কিছু করতে পারেন না । খাওয়ার শেষে নিজের বোনঝির সাথে দেখা করে নিজের মেয়েকে নিয়ে তিনি বাড়ি থেকে অফিসের জন্য বেরিয়ে যান । রাধিকা নিজের সমস্ত কাজ শেষ করে মুখে কোনমতে কিছু খাবার গুঁজে তাড়াতাড়ি ড্রেস বদল করে কলেজে যাওয়ার জন্য ছুটল।
হলুদ রঙের দোতলা রাজপ্রাসাদের মতন বাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে কলকাতারই কোন এক নামি পাড়ায়। বাড়ির গেটের ফলোকে জ্বলজ্বল করছে নামটা ‘রায়চৌধুরী ম্যানশন ‘ । গেটের ওপর মাধবীলতা গাছটা তার ফুল দিয়ে সজ্জিত করে রেখেছে বাড়ির গেটতাকে । সামনেই কালো উর্দি পরা গার্ড বসে আছে। বাড়ির ছাদে সযত্নে গড়ে ওঠা বাগানে মালি কাজ করতে ব্যস্ত।
চন্দ্রমল্লিকা ,অর্কিড , ডালিয়া , টগর , গেঁদা ও আরো নানান রঙের ফুলের সুগন্ধে মুখরিত হচ্ছে বাতাস। বাগানের মালিকে তদারকিতে ব্যস্ত নন্দিনী দেবী ওরফে নন্দিনী রায় চৌধুরী এই বাড়ির মালকিন। বয়স আন্দাজ ৪০ হবে । কলকাতা শহরের নামকরা বিসনেসম্যান অরণ্য রায় চৌধুরীর স্ত্রী, নন্দিনী দেবী মালিকে কিছু বোঝাচ্ছিলেন এমন সময় বাড়ির পরিচারিকা এসে জানান যে তাকে অরণ্য বাবু ডাকছেন। নন্দিনী দেবী তৎক্ষণাৎ ছাদ থেকে নেমে নিজের বেড রুমের দিকে চলে যান। অরণ্য বাবু বেডরুমে অফিসের যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলেন। নন্দিনী দেবী এসে দাঁড়ালেন ওনার পেছনে ।
অরণ্য বাবু: ” নন্দিনী তুমি কোথায় ছিলে ?? জানোতো তোমায় না দেখে আমার দিন শুরু হয় না । ”
অরণ্য রায়চৌধুরী, রায়চৌধুরী জুয়েলার্স এর কর্ণধার আর এই বাড়ির মালিক । গাম্ভীর্য ভরা পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়সের এই মানুষটি নিজের পরিবার ও কাজকে খুব ভালোবাসেন । কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় রায়চৌধুরী জুয়েলার্সের গয়নার শোরুম রয়েছে । অরণ্য বাবু ও নন্দিনী দেবীর এক ছেলে ও এক মেয়ে । ছেলে , আদিত্য রায় চৌধুরী , এই গল্পের নায়ক । ফর্সা , লম্বা, জিম করা চেহারায় সবথেকে আকর্ষনীয় হচ্ছে আদিত্যর উজ্জল গভীর বাদামি দুটো চোখ যা সহজেই সব নারী হৃদয়কে আকর্ষিত করে। আর .এস কলেজের থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট আদিত্য কলেজের ‘heart throb’।
কিন্তু সব মেয়েদের মনে ঝড় তুললেও এখনো নিজের মনের মতন কাউকে খুঁজে পাইনি । মেয়ে ইরাবতী রায়চৌধুরী, এই রায়চৌধুরীর ম্যানশনের রাজকন্যা। মা বাবার চোখের মনি ও তার দাভাইয়ের আদরের ছুটকি । প্রচন্ড ছটফটে দুরন্ত মেয়েটির বয়স আন্দাজ উনিশ-কুড়ি হবে ।আর .এস কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। এবার গল্পে ফেরা যাক ।
অরণ্য বাবুর প্রশ্নে নন্দিনী হেসে তার স্বামীর সামনে এসে দাঁড়ান।
নন্দিনী দেবী: ” আমি ছাদে ছিলাম অরণ্য। কয়েকটা নতুন ফুলের গাছ অর্ডার দিয়ে আনিয়েছি সেটাই বোঝাচ্ছিলাম মালিকে । এবার চলো ব্রেকফাস্ট করতে যাবে । নিজের স্বামীর গলার টাই বাঁধতে বাঁধতে নন্দিনী দেবী উত্তর দিলেন । ”
অরণ্য বাবু তার স্ত্রীকে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে গেলেন। ব্রেকফাস্ট টেবিলে অরণ্য বাবু আর নন্দিনী দেবী ব্রেকফাস্ট করছিলেন হঠাৎ সেখানে ছুটতে ছুটতে ইরাবতী আসে । ইরাবতী মিষ্টি করে হেসে অরণ্য বাবুর গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলে,
ইরাবতী : ” গুড মর্নিং ড্যাড। ”
অরণ্য বাবুও হেসে নিজের মেয়ের গাল টিপে চেয়ার টেনে তার পাশে বসিয়ে বলেন,
অরণ্য বাবু : ” গুড মর্নিং মাই প্রিন্সেস । ”
ইরাবতী এবার নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, ইরাবতী: ” গুড মর্ণিং মম। ”
নন্দিনী দেবী(হেসে) : ” গুড মর্নিং চিনি। ”
অরণ্য বাবু : ” প্রিন্সেস তোমার দাভাই কই??? তাকেতো তোমার সাথে দেখতে পাচ্ছি না । ”
ইরাবতী: ” দাভাই ঘুমোচ্ছে হয়তো । ”
অরণ্য বাবু (বিরক্তি নিয়ে) : ” সকাল দশটা বাজতে যায় আর নবাবপুত্রর এখনো ঘুম ভাঙলো না। দিন, দিন উচ্ছন্নে যাচ্ছে ছেলেটা। ”
নন্দিনী দেবী (রেগে ): ” অরণ্য ,,,,,, তুমি আমার বাবুকে এরকম ভাবে বলবে না । ও এখনো ছোট আছে । এমন কিছু বেলা হয়নি । একটু পরেই উঠে পরবে ঘুম থেকে।” অরণ্য বাবু (বিরক্তি নিয়ে) : ” তোমার আদরেই বাঁদর হচ্ছে ছেলেটা ।
আর কাকে ছোট বলছো তুমি?? ২৪ বছর বয়স হতে চলল তোমার ছেলের !!! এখনো সে তোমার কাছে ছোট ????!!!! তা নবাবপুত্রর কি মনে আছে যে আজ তার বোনের কলেজের প্রথম দিন?? সারাদিন তো গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় । তা বোনের প্রতি তার একটা কর্তব্য আছে সে খেয়াল আছে তার ??? ”
নন্দিনী দেবী (রেগে) : ” অরণ্য তুমি এই কথাটা বলতে পারলে আমার বাবুর ব্যাপারে ???? তুমি জানো না ও চিনিকে কত ভালবাসে ??? আর বাবু সবে কলেজে পড়ে এখন । কলেজ শেষ হলেতো ও তোমার বিজনেস জয়েন করবেই । তখন দেখবে আমার ছেলে মন দিয়ে কাজ করছে ।”
অরণ্য বাবু (গম্ভীর গলায়) : ” করলেই ভালো। ”
নিজের ব্রেকফাস্ট শেষ করে অরণ্য বাবু গম্ভীর মুখ করে অফিসে চলে গেলেন ।
নন্দিনী দেবী : ” চিনি তুই খাওয়া শেষ কর । আমি বাবুর ঘরে যাচ্ছি। ”
ইরাবতী : ” আচ্ছা মম। ”
নন্দিনী দেবী ব্রেকফাস্ট টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। তারপর নিজের ছেলের ঘরের দিকে চলে যান তাকে ঘুম থেকে তুলতে।
ঠিক সকাল দশটা নাগাদ রাধিকা তার বান্ধবী ঋত্বিকার জন্য অপেক্ষা করছিল বাড়ির সামনে। ঋত্বিকা বোস, রাধিকার ছোটবেলার বন্ধু । উনিশ – কুড়ি বছরের ফর্সা চেহারার টানা টানা চোখের ঋত্বিকা অংশুমান বোস ও সুপ্রিয়া বোসের একমাত্র সন্তান। অংশুমান বোস আর.এস কলেজের প্রিন্সিপাল ।ওনার স্ত্রী, সুপ্রিয়া বোস পেশায় একজন স্কুল শিক্ষিকা। রাধিকা ও ঋত্বিকা দুজনেই একই কলেজে ভর্তি হয়েছে । সুপ্রিয়া দেবী ও অংশুমান বাবু দুজনেই রাধিকাকে নিজের মেয়ের মতন স্নেহ করেন ও ভালোবাসেন।
এই পৃথিবীতে রাধিকার আপন বলে কেউ থাকলে সে হলো ঋত্বিকা। দুজনেই হলো প্রানের বন্ধু । ঋত্বিকা স্কুটি নিয়ে রাধিকার কাছে আসতেই রাধিকা তাতে উঠে বসে। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ রাধিকা আর ঋত্বিকা স্কুটি করে কলেজে পৌঁছায় । কিন্তু কলেজে ঢুকতেই বড়োসড়ো একটা গোল বাধে । ঋত্বিকার স্কুটিটা ধাক্কা লাগে একটা বড় কালো ইনোভার সাথে ।
গাড়ির ভেতর থেকে ২৩/২৪ বছরের এক ছেলে চিৎকার করে ওঠে । ফর্সা, লম্বা, সুপুরুষ, মেদহীন শরীর। কালো গভীর দুটো চোখ। রাজরূপ সিংহ রায় ও ইন্দিরা সিংহ রায়ের একমাত্র ছেলে , ঈশান সিংহ রায় । রাজরূপ সিংহ রায় কলকাতা শহরের এক নামি বিসনেসম্যান । ঈশান আর আদিত্য ছোটবেলার বন্ধু। গাড়ি থেকে মাথা বের করে রেগে চিৎকার করে ঈশান বলে,
ঈশান : “এই তুমি কি অন্ধ ??? এত বড় গাড়ি চোখে দেখতে পাচ্ছিলে না ??? ”
ঋত্বিকা: “অন্ধ আমি নয় বরং আপনি। এত বড় একটা গাড়ি নিয়ে কলেজের গেটের মুখে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। নিজে ভুল করে আবার অন্যকে চোখ রাঙাচ্ছেন !!! ????? ”
ঈশান: “তুমি জানো তুমি কার সাথে কথা বলছ????” ঋত্বিকা: “আমি জানতেও চাই না। ”
এবার রাধিকার দিকে তাকিয়ে ঋত্বিকা জিজ্ঞেস করে, ঋত্বিকা : “রাই ,,,,, তোর কোথাও লাগেনি তো ???” রাধিকা মাথা নাড়িয়ে না বলে । ঈশান এবার গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে রাধিকা আর ঋত্বিকার সামনে এসে দাঁড়ায়। চোখে মুখে তার রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। ঋত্বিকার সামনে এসে রেগে দাঁতে দাঁত ঘষে ঈশান বলে,
ঈশান : “কাজটা তুমি ভালো করলে না। জানো এই গাড়িটার কত দাম ????? তোমার ওই খাটারার থেকে অনেক দামি । আর এই কলেজে আমি প্রতিদিন এই জায়গাতেই পার্ক করি ,,,, বুঝতে পেরেছ???”
ঋত্বিকা( রেগে) : ” আপনি আমার স্কুটিকে খাটারা বললেন আপনার সাহস তো কম নয় ??!!!! আর কি তখন থেকে টাকার গরম দেখাচ্ছেন ??!!! এই পার্কিং জায়গাটা আপনার কেনা নয় । এখানে আপনার নামও লেখা নেই ; তাই একদম বেশি রোয়াপ দেখাবেন না।” ঈশান (রেগে দাঁত কিড়মিড় করে ): ” তোমার সাহস কি করে হয় আমার সাথে এইভাবে কথা বলার ??? আমি ঈশান সিংহ রায় । আমি চাইলে এক্ষুনি তোমাকে কলেজ থেকে বের করে দিতে পারি।”
ঋত্বিকা: ” এই শুনুন আপনি বাঘ সিংহ যাই হোন আমি আপনাকে ভয় পাইনা । আপনি চাইলে যা খুশি করে নিতে পারেন তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা । এই কলেজটা আপনার একার নয় তাই একদম বেশি দাদাগিরি ফলাতে আসবেন না । যতসব উজবুক লোকের সাথে দেখা হয় আমার। এই রাই চলত ক্লাসে যাই । আমাদের লেট হচ্ছে । আজ কলেজের ফাস্ট ডে তাই লেট করা উচিত নয়। ” কথাটা বলেই ঋত্বিকা রাধিকাকে নিয়ে কলেজ পেমিসের ভেতর ঢুকে যায়। ঈশানও রাগে মাটিতে পা ঠুকে কলেজে প্রবেশ করে। ঈশান (মনে মনে ) : ” তোমাকে আমি ছাড়বো না ।
এই ঈশান সিংহ রায় কি জিনিস তুমি হারে হারে টের পাবে।” ঈশান কলেজের ভেতর আসতেই মীরা আর আদিলের সাথে দেখা হয় । মীরা বাসু , সোমনাথ বাসু ও মন্দিরা বাসুর মেয়ে। সোমনাথ বাবু হলেন একজন কলেজের অধ্যাপক । মীরা আদিত্য ও ঈশানের বন্ধু । আদিল গুহ সঞ্জয় আর ইলোরা গুহর ছেলে। মীরার মতন আদিলও ঈশান আর আদিত্যর বন্ধু ।
মীরা: ” শান ,,, আদি কোথায় ??? আজ ইরার কলেজে জয়েন করার কথা না ??? ”
ঈশান: ” আদিকে অনেক বার কল করেছিলাম কিন্তু ও ফোন তুলছে না। নিশ্চয়ই ঘুমোচ্ছে । ”
আদিল: ” হ্যাঁ তাই হবে । কাল পার্টিতে প্রচুর ড্রিংক করেছিল । এক্ষুনি ওর শিলু বেবি এল বলে। কালতো আদি ওর সাথেই ছিল । কিন্তু শান, তোকে এত ডিস্টার্ব লাগছে কেন ???”
ঈশান : ” আর বলিসনা আদিল সক্কাল সক্কাল কলেজ আসতেই একটা মেয়ে আমার গাড়িতে ধাক্কা মারে। কিছু বলতেই মুখে মুখে তর্ক করে চলে গেল। বেয়াদব মেয়ে কোথাকার !!! এই আজ ফার্স্ট ইয়ারের প্রথম দিন না?? আচ্ছা করে খবর নিতে হবে সবার।”
আদিল :” হ্যাঁ ওই জন্যই তো আদির জন্য অপেক্ষা করছি । ”
ওদের কথা বলার মাঝেই একটা রয়েল এনফিল্ড কলেজ প্রেমিসে আসতেই সব মেয়েরা চিৎকার করে ওঠে । সারা কলেজে শোরগোল পড়ে যায় । বাইক থেকে 23/ 24 বছরের একটা ছেলে নামে। হোয়াইট টিশার্ট , ব্ল্যাক ডেনিম জিন্স , পায়ে সুসজ । চুলটা জেল দিয়ে সেট করা। হাতে ব্র্যান্ডের ঘড়ি। হেলমেট খুলে বাইকটা পাক করতেই কলেজের সব মেয়েরা হামলে পরে ছেলেটার উপর ।
ফর্সা মুখে গালে হালকা দাড়ি রোদের আলোয় চকচক করে ওঠে। ছেলেটা নিজের পাশে দাঁড়ানো উনিশ / কুড়ি বছরের একটা মেয়ের হাত ধরে তার বন্ধুদের কাছে এগিয়ে যায়। তবে ছেলেটার অজান্তেই একজোড়া মুগ্ধ চোখ তার দিকে তাকিয়ে ছিল । ছেলেটা চলে যেতেই মেয়েটিও নিজের ক্লাসে চলে যায়।
ঈশান: “আদি ,,,,,,, !! তোকে কতবার কল করেছিলাম। কই ছিলিস????? ”
ইরাবতী : ” হাই শানদা!!!! ”
ঈশান(হেসে) : ” হাই বার্বি ডল!!!! ”
ইরাবতী : ” দাভাই ঘুমোচ্ছিল। ”
আদিল : ” কাল রাতে পার্টি করার ফল । হাই ইরা!!!!” ইরাবতী: ” হাই আহিলদা!!! ”
মীরা : ” হাই ইরা !!!!! ”
ইরাবতী: ” হাই মীরাদি!!!! ”
মীরা : “আদি চল ইরাকে ক্লাসে দিয়ে আসি, আর ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্টের সাথে ইন্ট্রো করে আসি। ”
আদিত্য কথাটা শুনেই একটা রহস্যময় হাসি হেসে মাথা নাড়ায় শুধু । ইরাবতীকে নিয়ে বন্ধুদের সাথে ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস রুমে এসে ইরাবতীকে ফার্স্ট বেঞ্চে বসায়। আদিত্য: ছুটকি তুই আদিত্য রায় চৌধুরীর বোন। তাই সব সময় ফার্স্ট বেঞ্চে বসবি । আর কেউ কিছু তোকে বললে আমায় এসে জানাবি।
ইরাবতী : ” ঠিক আছে দাভাই । ”
ক্লাসরুমে তখনও কোন প্রফেসর আসেনি। স্টুডেন্টরা নিজেদের মতন কথা বলছিল। থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্টরা আসতেই সবাই চুপ করে যায়। ঈশান সারা ক্লাসরুম একবার ভালো করে দেখে নেয় । একটা কোণায় চোখ পড়তেই দেখে সকালের সেই মেয়ে দুটো বসে আছে। ঋত্বিকা আজ একটা রেড টপ আর ব্লু জিন্স পড়েছে। চুলে হেয়ার ব্যান্ড লাগানো। রাধিকা আজ একটা গোলাপী রঙের পাটিয়ালা পড়েছে। চুলটা বেণি করে একদিকে ফেলা । কিন্তু মুখটা ঢাকা ওড়না দিয়ে। শুধু কাল দুটো কাজল টানা চোখ দৃশ্যমান।
ঈশান (ফিসফিস করে ): “আদিল ওই কর্ণারে যে মেয়েটা জিন্স পড়ে বসে আছে তার সাথেই আমার আজ সকালে ঝামেলা হয়েছে। ”
আদিল (ফিসফিস করে) : ” তাহলে তো এই মেয়েটার খবর নিতে হচ্ছে একটু। কি বলিস???? ”
ঈশান (বাঁকা হেসে) : “একদম !!!! ।”
আদিত্য মুখে একটা টেডি স্মাইল দিয়ে তার স্বভাবসিদ্ধ স্টাইলে বলে ,
আদিত্য : ” Hi guys!!!! I am Aditya Roy Choudhary and they are my friends. We welcome you all to our college. If you face any problem or need any help you can come to us. We have come here to make friendship with you . So no need to get afraid or tensed of us. ”
এরপর আদিত্যর বন্ধুরা এক এক করে তাদের নাম বলে পরিচয় দেয় । আদিত্য সামনে থাকা বেঞ্চের কাছে এগিয়ে এসে একজন একজন করে নাম জিজ্ঞেস করতে থাকে। সেকেন্ড বেঞ্চে বসে থাকা একটা মেয়ের দিকে আঙুল দেখিয়ে আদিত্য জিজ্ঞেস করে ,
আদিত্য : Hey you???? What’s your name??
একটা হোয়াইট টপ আর জিন্স পরিহিত একটা মেয়ে উঠে দাঁড়ায় । মুখে অতিরিক্ত মেকআপ করাতে বড্ড দৃষ্টিকটু দেখতে লাগছে তাকে। মেয়েটি আদিত্যর কথা বুঝতে না পারায় জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। এবার আদিত্য বাংলায় তাকে তার নাম জিজ্ঞেস করতেই খুশিতে গদগদ হয়ে উত্তর দেয় ।
মেয়েটি: ” পিয়ালী চক্রবর্তী । ”
আদিত্য (বাঁকা হেসে) :” ওকে । ”
পিয়ালী নামটা শুনেই রাধিকা নিজেকে আরো সতর্ক করে নেয় পিয়ালী রাধিকার থেকে বয়সে বড় হলেও আগের বছর ফেল করায় ফার্স্ট ইয়ারেই রয়ে গেছে। আদিত্য হাতে একটা চক নিয়ে পিয়ালীর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে ,
আদিত্য : ” যাও বোর্ডে গিয়ে লেখ ‘ I AM A FOOL’.” পিয়ালী ইংরেজি অত ভালো করে জানেও না আর বোঝেও না । তাই আদিত্যর বলা কথার মানে ঠিক ঠাহর করতে পারল না। তাকে এত সুন্দর দেখতে একটা ছেলে কিছু করতে বলছে এটা ভেবেই খুশিমনে হাসিমুখে চক হাতে নিয়ে বোর্ডে বড় বড় করে আদিত্যর বলা কথা লিখল। ক্লাসরুমে উপস্থিত সকলেই হাসিতে ফেটে পড়ে । পিয়ালী কাচুমাচু মুখ করে নিজের সিটে গিয়ে বসলো । ঈশান এবার ঋত্বিকার দিকে তাকিয়ে বলে,
ঈশান : ” এই যে তুমি , কি নাম তোমার??? ”
ঋত্বিকা (ডাটের সাথে উত্তর দেয়) :” আমার নাম জেনে আপনি কি করবেন??? ”
আদিত্য( মন ভুলানো হাসি দিয়ে) : “এই যে মিস,,,,,,??? এত মিষ্টি দেখতে তোমাকে আর গলার আওয়াজে এত ঝাঁজ কেন তোমার ???? মিষ্টি মেয়ে তোমার নাম জানতে পারি??? ”
ঋত্বিকা : ” ঋত্বিকা বোস । ”
ঈশান (একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে) : ” তো মিস ঋত্বিকা বোস,,,, আমি তোমার থেকে বড় হই তাই আমার কাছে এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করো। ”
ঋত্বিকা এক মুহূর্ত কিছু একটা ভেবে নিজের জায়গা থেকে উঠে এসে ঈশানের সামনে এসে দাঁড়ায়। দুজনেই দুজনের দিকে ক্ষণিকের জন্য স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে । ঋত্বিকা আচমকা ঈশানের পায়ে মারতেই ঈশান ব্যালেন্স হারিয়ে পড়তে গেলে ঋত্বিকা ধরে নেয় ।ঋত্বিকা( দাঁতে দাঁত ঘষে) : ” ঋত্বিকা বোস যাকে তাকে প্রণাম করে না বুঝতে পেরেছেন সিংহ মশাই????” তারপর মিষ্টি করে হেসে বলে,
ঋত্বিকা : ” আরে !! আপনি আমায় প্রণাম করতে বলে নিজেই আমায় প্রণাম করতে যাচ্ছিলেন সিংহ মশাই????!!! আমার বাপি আমায় বলেছে , বড়রা ছোটদের পায়ে হাত দেয় না ; তাই প্লিস আমায় প্রণাম করে লজ্জা দেবেন না । ”
ক্লাসে উপস্থিত সকলে হা হয়ে যায় এই কান্ডে। ঈশানের বন্ধুদেরও প্রচন্ড হাসি পেলেও কোনমতে তারা তাদের হাসি চেপে রাখে।
ঈশান (রেগে ): ” Miss Bose, you will have to pay for what you have done today. ”
কথাটা বলেই ঈশান ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আদিত্য: শান শোন…. ।
আদিত্য ঈশান এর পেছনে ছোটে । তার সাথে বাকি বন্ধুরাও ছুটে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
.png)
Post a Comment