পত্রসাহিত্য
প্রিয় ঠাকুমা ,
কী অদ্ভূত দেখো,একই বাড়িতে থাকি অথচ তোমাকে চিঠির মাধ্যমে আমার মনের কথা জানাতে হচ্ছে। পারুল মাসি এই ঘরটা যখন মুছতে আসবে, তার হাতে চিঠিটা পাঠিয়ে দেব।
আচ্ছা ঠাকুমা, বড়দের বোধহয় কথায় আর কাজে কোনো মিল থাকে না তাইনা? বাবা আর মা বই পড়িয়ে আমাকে কর্তব্য শেখায়,বড়দের গুরুজনদের শ্রদ্ধা করতে হয়। বাবা মায়ের কথা শুনতে হয়। অথচ দেখো ওরা তো তোমার কথা শোনে না।
জানো তো দিন রাত ‘তোমাকে প্রথম হতে হবে’ শুনতে শুনতে আমার বড্ড ক্লান্তি এসে যায়। সবাই কী প্রথম হয় নাকি? বিকালে মাঠে গিয়ে খেলতে ইচ্ছা করে। তখন আবার আমাকে পড়াতে গৃহশিক্ষিকা আসেন। শনি আর রবিবার গৃহশিক্ষিকা আসেন না,সে দুইদিনের একদিন নাচের ক্লাশ একদিন আঁকার ক্লাশ। আমার যে বড্ড খেলতে ইচ্ছা করে ঠাকুমা।
ভোর বেলা একটু ভোরের হাওয়া খেতে,শীতে একটু রোদ পোয়াতে ইচ্ছা করে। তাও দেয় না। বলে ভোরে পড়লে নাকি পড়া মনে থাকে। ঠাকুমা গো তুমি কত গল্প জানো। খুব ইচ্ছা করে তোমার কোলে বসে গল্প শুনতে। ‘ঠাকুমার ঝুলি র গল্প গুলো তুমি কী সুন্দর করে বলতে পারো। আমায় শুনতে দেয় না ওসব নাকি ব্যাকডেটেড আর তুমিও নাকি ব্যাকডেটেড। আচ্ছা আমি যখন বড় হব আমার মা বাবাও কী আমার কাছে ব্যাকডেটেড হয়ে যাবে?
তুমি তো বাবা কাকুদের এতজনকে বড় করলে স্বাবলম্বী করলে,তবে কেন বাবা কাকুরা বলে ‘একমাস আমার দায়ীত্ব একমাস তোর এভাবে চলবে’। তুমি তো সবার দায়িত্ব নিতে পেরেছিলে।
সন্ধ্যার আকাশ যখন সূর্যাস্তের রঙে রঙিন হয়,তখন খুব ইচ্ছা করে তোমার করা সন্ধ্যা আরতী দেখতে। কিন্তু আমার তো ছুটি নেই,নেই তোমার কাছে যাওয়ার অধীকার। এত বড় বাড়ির একটা কোনের ঘরে বাবা কাকুরা তোমায় থাকতে দিয়ে নিজেরা সব ভালো ঘরগুলো নিয়েছে। তাও তো তুমি সব সময় বলো আমি যেন বড় হয়ে বাবা মাকে দেখি,যত্ন করি, তুমি কী ভালো গো ঠাকুমা।
আমার খুউউউব ইচ্ছা করছে তোমায় জড়িয়ে শুয়ে ঘুমাতে।
কিন্তু !’’’’’!!!!!!!!!খুব কান্না পাচ্ছে ঠাকুমা খুউউউউব!!!!!! তুমি একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে খুব ভালো লাগতো!
তোমার ও কী ইচ্ছা করে না তোমার নাতি নাতনীদের কাছে পেতে?জানি তুমিও একই ভাবে আমায় কাছে পেতে চাইছ,কিন্তু বাবা মা যে চায় না।
আমি কিন্তু সব মনে রাখলাম,আমার মাও তো একদিন ঠাকুমা হবে,সেইদিন এর বিচার হবে। আর সেই বিচারের আশায় আমি বসে রইলাম।
ইতি তোমার নাতনী ।
রীতা।

Post a Comment