অণুগল্প কি এবং কেন ? শংকর ব্রহ্ম
এক.
আজকাল প্রায় প্রতিটি গ্রুপে অণুগল্প লেখা হচ্ছে। পত্র পত্রিকায় অণুগল্প সমাদরে প্রকাশ করা হচ্ছে। অণুগল্পের বই বের হচ্ছে। খুবই ভাল খবর। বাংলা সাহিত্যের একটা নতুন দিক।
এই অণুগল্পকে কি’করে আরও বেশি দিকে দিগ্বিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সে চেষ্ট করা উচিৎ। কিভাবে সাহিত্যধারায় আরএ গভীরভাবে সম্পৃক্ত করা যায়,সেই বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করা উচিত। তার জন্য যারা অণুগল্প লিখছেন তাদের দায়িত্ব অনেক বেশী।
সাম্প্রতিক অণুগল্প লেখায় বহু রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা দেখা যাচ্ছে। এই পরীক্ষা নিরীক্ষা অনেক সময় পাঠকের অনুভবের বাইরে চলে যাচ্ছে, বোধগম্যের হচ্ছে না। আবার সেই লেখাগুলোকেই কিছু পাঠক বলছে অসাধারণ, এটাই হল আসল অণুগল্পের লেখকদের সমস্যা।অনেক সময় এখানে যখন লেখকই পাঠক। যারা শুধুমাত্র পাঠক তারা এ রকম ‘গল্প নয় অথচ অণুগল্প’কে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন। অথবা না পড়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনায়াসে।
আবার সেইসব পাঠকই ছোট ছোট লেখা, দীপ্ত লেখা, মনগ্রাহী লেখা, অন্য ভাবনার লেখা, ভাল বিষয় ভাবনার লেখা ঠিক পড়ছে। সেগুলো অণুগল্প কি না, গল্পের ফরম্যাটে আছে নাকি অণুগল্পের নিয়ম মানছে কিনা, অণুগল্পের নিয়মটা কি ইত্যাদি নিয়ে ভাবনা সাধারণ পাঠক ভাবে না। তারা শুধু তাদের ভাল লাগা দেখে।
ছোট অথচ সহজ সরলভাবে সুনির্দিষ্ট বিষয়কে সামনে রেখে ভাবনার গভীরে পাঠককে নিয়ে যাওয়াই লেখকের যথার্থ কাজ।পড়ার সময় যেন কোন শ্রেণীর পাঠকের বুঝতে কোন অসুবিধা না হয়।পড়ার পরে বিষয়ের গভীরে পাঠক যেন সহজেই ঢুকতে পারে। সেই লেখাই বোধহয় জনসাহিত্য। না হলে পড়তে পড়তে কিছুই বুঝতে পারলাম না,আবার পড়ে,তবে বুঝতে হবে তাহলে পাঠকের কি আর সে ধৈর্য থাকবে সে লেখা আবারও পড়ে দেখবার?
দুই.
অণুগল্প হল আকারে খুবই এক ধরণের গল্প।সাধারণত ২৫০ থেকে ৩০০ শব্দের মধ্যে অণুগল্প লেখা ভালো। তার কমেও আজকাল লেখা হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ শব্দের মধ্যে।বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুর স্বাদ এনে দেওয়ার প্রচেষ্টা এক রকমের।কখনো কখনো কবিতার মতো ভাষ্যে, ছোট এক ধরণের গল্প।এতে অভিঘাত বেশি থাকে। স্বল্প বর্ণনায় পাঠককে চমকে দেওয়া কিংবা আনন্দ-বেদনার রস আস্বাদন করানোটাই মূলতঃ অণুগল্পের কাজ। অণুগল্পে সাধারণত তিনটা প্যারা থাকে। প্রথম প্যারা পড়ার পর পাঠক যা ভাববে, দ্বিতীয় প্যারায় সে ভাবনার পরিবর্তন ঘটবে। এবং তৃতীয় ও শেষ প্যারায় গিয়ে পাঠক চমকে যাবে। কিন্তু এতে করে গল্পের বিষয়বস্তুর কোন পরিবর্তন হবে না।
পূর্বসূরীরা অনেকেই অণুগল্প লিখেছেন। তার মধ্যে বনফুল অন্যতম। রবীন্দ্রনাথেরও কিছু অণুগল্প পাওয়া যায়। তাছাড়া ঈশপের গল্প। এরকম আরো অনেকেই এ’রকম আরও কিছু গল্প লিখেছেন সত্তর আশির দশকে তখন তার নাম ছিল মিনি গল্প।ওই সময় “পত্রাণু” নামে একটি মিনি পত্রিকাও বেরতো,অমিয় চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়।লেখকদের মধ্যে ছিলেন অনেকেই। যেমন,বনফুল, সুবোধ ঘোষ, আশাপূর্ণা দেবী,শিবরাম চক্রবর্তী, নারাযণ গাঙ্গুলী,সমরেশ বসু,জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, নীহাররঞ্জন গুপ্ত, সুনীল গাঙ্গুলী, শক্তি চ্যাটার্জী, শীর্ষেন্দু মুখার্জী, বরেন গাঙ্গুলী,অতীন ব্যানার্জী, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ,দিব্যেন্দু পালিত প্রমূখ।
★(অণুগল্পের যে তিন প্যারার কথা, এখানে বলা হয়েছে,সেই নিয়মের বাইরে গিয়েও ইদানিং অণুগল্প লেখার চর্চা চলছে। মন্দ কি?)
*ঋণ স্বীকার ঃ – দীপঙ্কর বেরা ও মেহেদী হাসান।
#storyandarticle

Post a Comment