নন্দনতত্ত্ব - সৌম্য ঘোষ
নন্দনতত্ত্ব এক সুগভীর চেতনা। অনন্য উপলব্ধি নন্দনতত্ত্বের অন্তরাত্মায় সুন্দরের রূপময় উপস্থিতি, ভাবের সুগভীর পরিপূর্ণতা। আবার প্রকাশের তীব্র আকুতি। কোন কোন পন্ডিতগণ বলেন, নন্দনতত্ত্ব অনির্বচনীয় হলেও তার স্বরূপ অনাস্বাদিত নয়। কেউ বলেন, ' Aesthetics' , কেউ বলেন, সৌন্দর্য শাস্ত্র। কিন্তু সকল সীমার বাইরে নন্দনতত্ত্ব 'বৃহত্তর এক উপলব্ধি'। পশুর মধ্যে অনুভূতির এই সূক্ষ্মতা নেই।
এই চেতনা কাব্যশিল্পের জগৎজুড়ে পরিব্যাপ্ত। এর উৎপত্তি শিল্পসৃষ্টির প্রথম তৎপরতার সমসাময়িক। শিল্প মানবমনের আনন্দিত উপলব্ধির বহিঃপ্রকাশ এবং সেই শিল্পকে সৌন্দর্যের নানান দৃষ্টিকোণ থেকে যে পরীক্ষা বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়, তার নাম 'নন্দনতত্ত্ব'।
এখানে আমার মনে প্রশ্ন আসে, নন্দনতত্ত্ব কি কেবলই 'আনন্দিত উপলব্ধি'? নন্দনতত্ত্বের যাত্রাপথ কি কেবল 'সুন্দরের অভিমুখে'। সৌন্দর্যের সাথে মঙ্গলভাবনা সম্পৃক্ত না হলে, মানবীয় গুণগুলি না থাকলে সুন্দর পরমসুন্দর হয়ে ওঠে না। কেউ বলে থাকেন, 'প্রকৃতি সুন্দর'।
কেউ বলেন, 'প্রকৃতি ও মানবের মেলবন্ধনে এক অপূর্ব সুন্দর রূপকল্প সৃষ্টি হয়।' আবার অনেকে জড়জগতের ঊর্ধ্বে এক পরমসত্ত্বাকে অনুভব করেন। কেউ সৌন্দর্যের বিচারে ভাববাদী, কেউবা বস্তুবাদী । প্রকৃতার্থে, আনন্দের অমৃতরস আস্বাদনে সকল বিরোধের অবসান ঘটে। উপনিষদ তাই বলেন,
" আনন্দরূপম অমৃতং যত বিভাত"
তবে সেই বেদনার প্রকাশে এক ধরনের আনন্দ থাকে। যন্ত্রণা থেকে এক ধরনের মুক্তি। প্রকৃতপক্ষে নন্দনতাত্ত্বিক শিল্পকে কোন বাঁধাধরা নিয়মের খাঁচায় বদ্ধ করা যায় না।
তাই নন্দনতত্ত্বের বিষয়বস্তুর কোন সুনির্দিষ্ট সীমারেখা থাকতে পারে না। যেহেতু শিল্পের একটি বড় অংশ সচেতন বা অবচেতন মনের সৃষ্টি, তাই নন্দনতত্ত্বের বিচার তর্ক ভিত্তিক নয়, অভিজ্ঞতা ভিত্তিক।।
লিখেছেন •••• সৌম্য ঘোষ। চুঁচুড়া। পশ্চিমবঙ্গ।
#storyandarticle
Post a Comment