বই রিভিউ - তৈমুর খান

 

webtostory


চারদিগন্তের কবি ও তাঁদের কাব্যচতুষ্টয়

🌱

তৈমুর খান 

🌸


 বাংলা কবিতার এত বাঁক, এত বৈচিত্র্য, এত নতুনত্ব বারবার অভিভূত করে। শুধু তরুণ প্রজন্ম নয়, সাতের দশকের কোনো কোনো কবিও প্রাজ্ঞ তারুণ্যে প্রদীপ্ত হয়ে ওঠেন। বাংলা কবিতা দর্শনে-ক্ষরণে-মননে-উপলব্ধিতে এবং আত্মচেতনায় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অগ্রসর হয়ে চলেছে। স্বাভাবিকভাবেই কবিতার পাঠক হিসেবে আমাদের কৌতূহলেরও শেষ নেই। সর্বদা নতুন কাব্যের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। আজকের আলোচিত চারটি কাব্যই কবিতার চার দিগন্তকে চিহ্নিত করেছে।



webtostory




 কবি নিয়াজুল হকের 'হেলমেট পরে নিয়েছি'(প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০২২) ৫৮টি  স্মার্ট কবিতার ঝকঝকে সংকলন। সাতের দশক থেকে লেখালেখি শুরু করলেও তেমন ভাবে নিজেকে কখনো পেশাদার লেখক করে তোলেননি। সর্বদা ব্যতিক্রমী পথ অন্বেষণই করে গেছেন। এই কাব্যটি তারই চূড়ান্ত ফল। প্রতিটি কবিতাই মেধাবী তরবারির মতো সূক্ষ্ম ও তীব্র। জীবনের প্রতি, সময়ের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি এবং তথাকথিত অমানবিক ধ্বংসের প্রতি তীব্র শ্লেষের কশাঘাত হেনেছেন।


নির্মেদ অর্থাৎ বাহুল্য শব্দবর্জিত কবিতায় যে ইমেজিস্ট প্রেক্ষণ রচনা করেছেন এই মুহূর্তে তা খুব কম কবির মধ্যেই দেখা যায়। বিষয়কে ধারণ করেও বিষয়হীন প্রজ্ঞায় এম্পটিনেসের ভেতর নিজেকে চালনা করেছেন এবং সেখানেই সর্বময় অনন্তের সাক্ষাৎ পেয়েছেন। নীতি-আদর্শের অবক্ষয়, শোষক-শাসকের প্রতারণা, মূল্যবোধহীন সমাজের উত্থান সবকিছুর সামনেই কবি হেলমেট পরে দাঁড়িয়েছেন আর নিজেকে যুগযাত্রীর ভূমিকায় সৈনিক করে তুলেছেন। সাহস ও দৃঢ়তায়, দার্শনিকের প্রজ্ঞা নিয়ে ঘোষণা করেছেন:


 "তোমরা/ জীবন নিয়ে, মৃত্যু নিয়ে, নিরাপত্তা নিয়ে/ একটুও ভাবিত হয়ো না/ দৈনন্দিন থাপ্পড় খাওয়ার মতোই/ সবই তো আপেক্ষিক"

 এইখানে এসেই কবি নির্ঝর হয়ে যান। মোহ-মালিন্য দূর হয়ে যায়। নিজেকেও ঋষির মতো মনে হয়। সমগ্র কাব্যটিতেই এই বোধের ঝাঁকুনি উপলব্ধি করেন পাঠক। যে গন্তব্যের অভিমুখে আমাদের উড়ান, সেই গন্তব্য যখন অনন্ত তখন নিজেরই বিনির্মাণ ফিরে আসতে বাধ্য—কবি এটাই বিশ্বাস করেন। তাই ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকেই সূর্যের উদয় দেখতে পান।


ঈশ্বরের মৃতদেহ জনগণই বয়ে নিয়ে যায়। নিজের লুকানো জার্সির কথাও উপলব্ধি হয়। পাথরকেও ফুল হয়ে ফুটতে দেখেন। এই বিনির্মাণ শব্দের মধ্যেও ফিরে এসেছে। হত্যার দৃশ্য দেখে তখন কবির মনে হয়: "লম্বা-চওড়া গোল/ কতরকম অপমান"। অপমানকে একই সঙ্গে তিনটে ভিন্ন বিশেষণে তিনি বিশেষিত করেন। ইংরেজি সাহিত্যিক, তাত্ত্বিক ও সমালোচক টেরি ঈগলটন(১৯৪৩) এই কারণেই বলেছেন "Deconstruction insists not that truth is illusory but that it is institutional."(Terry Eagleton)

অর্থাৎ ডিকনস্ট্রাকশন জোর দেয় যে সত্যটি অলীক নয় বরং এটি প্রাতিষ্ঠানিক।


 এই প্রতিষ্ঠানিক রাষ্ট্র,সামাজ ও ব্যক্তির সত্যের কাছেই নিয়াজুল হক আমাদের উপস্থিত করেছেন।



webtostory





 কবি সানাউল্লাহ সাগরের 'মেঘের কার্তুজ'(প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০২২) বাংলা কবিতায় একটা নতুন দিশারীর সংযোজন। বাংলাদেশের এই কবি বয়সে খুবই তরুণ কিন্তু কবিতা ভাবনায় বহুমুখী উৎসের সমাগম ঘটিয়েছেন। ধারণা, দৃশ্য, উপলব্ধিকে তিনি সচলতা দান করেছেন। কখনো কিউবিজমের প্রশ্রয়ে আবেগকে বাস্তবতায় পর্যবসিত করেছেন। কখনো দেখা দিয়েছে স্বয়ংক্রিয়তা। তাই শব্দের ও দৃশ্যের বিক্ষিপ্তকরণ ঘটেছে। যেমন একটা কবিতার কিছুটা অংশ: "ছিনালের মাথা থেকে ভেঙে পড়ে আড়াল/ ভুলে থাকা হলো না তো আর—রেডিওর ছাদ।/ ঘুম থেকে মৃত্যু/ কতদূর সেয়ানা/ প্রচার হতে হতে থেমে গেলো সে/— বৃত্তের ড্যাস।"


 আরেকটি কবিতার কিছুটা অংশ এমন:

"ঘুড়ি স্বাদের ইশকুল; মায়া তবু জমে থাকে পালকীর নাকে, ঠোঁটে।খিড়কী/ ডাকে— মনোযোগ ভানে মসলার কারুকাজ!"

 পাঠক তখন খেই খুঁজে পায় না। জার্মান ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক টমাস মান(১৮৭৫-১৯৫৫) এই কারণেই অ্যাবসার্ড পোয়েট্রি সম্পর্কে বলেছেন: "Solitude gives birth to the original in us, to beauty unfamiliar and perilous - to poetry. But also, it gives birth to the opposite: to the perverse, the illicit, the absurd."

(Thomas Mann, Death in Venice and Other Tales)


অর্থাৎ একাকিত্ব আমাদের মধ্যে মূলের জন্ম দেয়, অপরিচিত এবং বিপজ্জনক সৌন্দর্যের-কবিতার। কিন্তু এছাড়াও, এটি বিপরীতের জন্ম দেয়: বিকৃত, অবৈধ, অযৌক্তিক। 'মেঘের কার্তুজ' সেই ধরনের কাব্য মূলের ঠিকানা থাকলেও বিপজ্জনক-সৌন্দর্যের ঠিকানাও আছে। অস্বাভাবিক অযৌক্তিক। 'কারিগর' নামক একটি কবিতায় লিখেছেন: "বলোতো রোজমাতাল আমি/ যদি হতে পারতাম/ তোমার গন্ধে মাতাল;/ তুমুল এক বরফ/ খিদে ও ক্ষত থেকে নদী নদী পরে—

/ না জাগার মতোই ঢুকে যেতাম/ স্ব-মিলের তোরঙ্গে।" এই কবিতার অর্থ বিষয় অন্বেষণ করা ভ্রান্তিকর। একাকিত্বের চলন থেকেই উদ্গত ও সম্মোহিত।


webtostory





 কবি তসলিমা হাসানের 'কেউ কেউ কেবল কাঙাল হয়'(প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০২২) আত্মোপলব্ধির কাব্য বলা যায়। বাংলাদেশের বরিশালে জন্মগ্রহণ করলেও কবি চাকরিসূত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেছেন। বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি ইকবাল হাসানের স্ত্রী বলেও কাব্য চর্চার বৃত্তের ভিতরেই রয়ে গেছেন।শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজের একাকিত্ব যাপনকে কবিতায় রূপ দিয়েছেন। বিশেষ করে মিশ্রবৃত্তেই তিনি কাব্য রচনা করতে ভালোবাসেন। ভাবনার মধ্যে নীতি-নৈতিকতা আদর্শ-ঐতিহ্যকে অবলম্বন করেই বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য তুলে ধরেন। সামাজিক জীবনের শৃংখলাবদ্ধতাকেই তিনি অবলম্বন করতে চান। এযুগের তরুণ-তরুণীর প্রেমের নামে অশ্লীলতা ও যৌনতাকে তাই তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেন কবিতায়:


"আচ্ছা এই খোলা পার্কেই প্রেমিকার চোখের দিকে চোখ রাখলে/ কি ভালোবাসা হয় না?/ ভালোবাসা মানে কি মাঝে মাঝে বেড ডেটিং,/ আধুনিক রাধা-কৃষ্ণ ওই জলকেলি!/ বিয়ের আগে না করলে কি ভালোবাসা হয় না?/ ভালোবাসা মানে কি প্রেমিকার সাথে সারারাত ফোনে অশ্লীল কথা বলা?/ আর প্রেমিকের কাছ থেকে অজস্র লিপ কিস, ডিপ কিস গ্রহণ করা?"


 প্রেমের এই ট্রেন্ডকে তিনি যেমন ঘৃণা করেন, তেমনি গভীর সংকটময় এই সময়কে দেখেও আতঙ্কিত হন। ছদ্মবেশী মানুষেরা কবির কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। তাই এই সময় কি উপলব্ধি করেই লিখেছেন 'মানব মুখোশ':

"পৃথিবী গভীর সংকটময়/ এখন সময়,/ মেঘেদেরও মন ভাঙা/ কাউকে চিনি না,/ মনে হয় অচেনা।/ নেই কারও দোষ;/ সকলে পরে আছে মুখোশ!"


 স্বার্থপর পৃথিবীতে মানুষ আর মানুষের পাশে নেই। মৃত্যুর দৃশ্য কবিকে ব্যথিত করেছে। প্রিয় শহর, প্রিয় মানুষ, প্রিয় দেশ, প্রিয় নদী আর আকাশ-নিসর্গলোকে মনে-মনে পাড়ি জমিয়েছেন। আশ্রিতা হয়েছেন। স্মরণ করেছেন। কবিতায় সেসব উপলব্ধি সঞ্চারিত হয়েছে। নিজের দুঃখ-বেদনাকে প্রকৃতির সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন। কষ্ট থেকে কখনো পলায়ন করতে চাননি। তাই নিজস্ব ভঙ্গিতেই উচ্চারণ করেছেন: চাঁদকে, জ্যোৎস্নাকে, মেঘকে, বৃষ্টিকে, সমুদ্রকে, পাহাড়কে, ফুলকে, পাখিকে ভালোবেসে রোমান্টিক হবার ইচ্ছা তাঁর নেই। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন:


"আমি কেবল রোদ্দুরকে ভালোবেসেছি/ হাত বাড়ালেই জ্বলে যাব জেনেও ভালোবেসেছি/ ওই তেজে ছাই হবো জেনেও ভালোবেসেছি/ আমি দূরত্বকে ভালোবেসেছি/ আমি অস্পৃশ্যতাকে ভালোবেসেছি/ আমি শুধু যন্ত্রণাকে ভালোবেসেছি/ আমি আমার দীর্ঘশ্বাসকে ভালোবেসেছি/ আমি প্রতিদিনের মৃত্যুকে ভালোবেসেছি।" ৬৪পৃষ্ঠার কাব্যের সমস্ত কবিতাতেই সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়ার জাগরণ টের পাই। কবি ব্যতিক্রমী হতে চাননি, কিন্তু মানবিক হতে চেয়েছেন। দার্শনিক হতে চাননি, কিন্তু কল্যাণী হতে চেয়েছেন। অমৃত পান করতে চাননি, কিন্তু নীলকণ্ঠী হতে চেয়েছেন। তাই কবির জন্য আমাদেরও সমীহ জেগে উঠে।



webtostory





 কবি অচিন্ত্য রায়ের 'কাঁকর জন্ম'(প্রথম প্রকাশ কলকাতা বইমেলা ২০২২) সহজ মনের সহজিয়ার নিবেদন গুচ্ছ এই কাব্যটি। ৫৬টি কবিতায় আছে এক স্নিগ্ধতার ছায়াঘন বাতাবরণের অভিমুখ। প্রাত্যহিক জীবনের আত্মমগ্ন পাঠ থেকে কবি ভাষা অন্বেষণ করেছেন। সেখানে পূর্ণ হতে চাওয়া জীবনের উদ্দাম স্বপ্নের বিভোরতা দেখা দিয়েছে।


গাভীর বাঁটে দুধ নেমে আসা যে সকাল, কবির প্রশ্ন কেন সেই সকাল ছিনতাই হয়ে যাবে? তরুণ কবি যে  অনুসন্ধিৎসা নিয়ে কাব্য-সাহিত্যে পদার্পণ করেছেন তা জীবনের  ঘনীভূত স্বপ্নের মায়াদর্পণ থেকেই উদ্গত এক বিশ্বাসভঙ্গ উপলব্ধি। কবিতাগুলি নিরীহ অনুভূতিপ্রবণ হয়েও আত্মরসায়নের গভীরতায় স্থিরতা চেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অকপট আকাঙ্ক্ষার প্রজ্জ্বলনে প্রপীড়িত হয়ে উঠেছে। কবি যখন লেখেন:


"জখম লেখা হয়েছে ফুসফুসে/ উগ্র অক্ষর পেরেকের মতো গেঁথে।"

 তখন বোঝা যায় কষ্টের প্রকল্প কীভাবে দানা বেঁধেছে হৃদয়ে। কবিতার প্রেক্ষাপটেও বিপন্নতার প্রতিভাস:


"রূঢ় অন্ধকার, রক্তাক্ত যোনি আঁকড়ে চিরকাল বিচারের অপেক্ষা করে।"

 তখন ভোরের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়:

"পাশ ফেরা ভোরে পাক খায় আর্তনাদ।"


 এই আর্তনাদ কাব্যের সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের পায়ে শিকলের শব্দ শুনতে শুনতে পৃথিবী ফ্যাকাশে বাসি ফুলের মতো হয়ে যায়। অজস্র ব্যর্থতায় জীবনের বানানও ভুল উচ্চারিত হয়। তাই এত বিকৃতি। এত বিমর্ষতা।


যে প্রসন্নতার আকাঙ্ক্ষায় তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বালানো হয়, ছাই ও নিমপাতায় আরোগ্য প্রার্থনা করা হয়, শঙ্খ ও গোবর লেপনের মধ্য দিয়ে বিশ্বাস ও সংস্কারকে মান্যতা দেওয়া হয়—কিন্তু সে সবের মধ্যেও জীবনের নষ্ট হওয়া দুঃখ ও শ্রমের কাতরানি নিবারণ হয় না। তাই কবি নিজের কাছেই ফিরে আসেন। 'কবিজন্মের সোঁদা উল্লাস'-যাপনে মগ্ন হন:


"মাটি ছাড়া জীবনে কিছুই নেই/ কী বলো হে গরয়া গোঁসাই?/ শিংএর লড়াইয়ে আমি কেবল/ বাঁদনার অহিরায় নেশাময় হয়ে/ গোবরময় ছড়াঝাঁট উঠানে বসে থাকি।" মেঠো শব্দের ব্যবহারে প্রচলিত জীবনবোধের অকৃত্রিম প্রয়োগে অচিন্ত্য রায় কবিতাকে জীবন্ত করে তুলেছেন।


আমাদের জীবনে যা আছে, আমাদের জীবন যা চায়, এমনকী আমাদের কুকুরস্বভাবও কবি নিরীক্ষণ করেন। কখনো কবিতার নাম 'মুনিষ', কখনো 'নয়নজুলি'র মধ্য দিয়ে কবি বুঝিয়ে দেন তাঁর অবস্থান, ক্ষেত্রসমীক্ষার অভিঘাত ও অভিজ্ঞতার ব্যাপ্তি। কাঁকরজন্মের ইতিহাস এভাবেই লেখা হয়।





  🐴

১) হেলমেট পরে নিয়েছি: নিয়াজুল হক, প্ল্যাটফর্ম প্রকাশন, সিঙ্গুর হুগলি-৭১২১২৪

 প্রচ্ছদ: তৌসিফ হক, মূল্য-১৫০ টাকা। 

 🐴

২) মেঘের কার্তুজ: সানাউল্লাহ সাগর, বার্ণিক প্রকাশন, ২ নং পাকমারা লেন, বর্ধমান-৭১৩১০১

 প্রচ্ছদ- আল নোমান, মূল্য-১৫০ টাকা।

 🐴

৩) কেউ কেউ কেবল কাঙাল হয়: তসলিমা হাসান,বার্ণিক প্রকাশন, ২ নং পাকমারা লেন, বর্ধমান-৭১৩১০১

 প্রচ্ছদ- আল নোমান, মূল্য-১৫০ টাকা।

 🐴

 ৪) কাঁকরজন্ম: অচিন্ত্য রায়,বার্ণিক প্রকাশন, ২ নং পাকমারা লেন, বর্ধমান-৭১৩১০১

 প্রচ্ছদ- তৌসিফ হক, মূল্য-১৫০ টাকা।